Menu Bar

বৃহস্পতিবার, ১১ মার্চ, ২০১০

মুনাফিক

মাজার এলাকার রোডে ঢুকলেই উৎকট একটা দুর্গন্ধ নাকে এসে ঢুকে। কিছুদূর এগোলে সেই উৎকট গন্ধ প্রকট হয়ে প্রসাবের গন্ধে পরিণত হয়। এছাড়া অন্যান্য দুর্গন্ধও যুক্ত হয়েছে এই রোডে। যেমন- বাসি পঁচা খাবারের উচ্ছিষ্ট, পঁচা তরকারী, মরা পাখির গন্ধ, পায়খানার গন্ধ ইত্যাদি।

ফকির,পাগল আর হিরোইনখোরদের আখড়া এই রোড। ওদের তো আর ঘর-বাড়ী নেই যেখানে প্রাকৃতিক কর্মগুলো সম্পাদন করবে। তাই রাস্তার মধ্যেই প্রয়োজনীয় সব কাজ সারে তারা। তবে দিনের বেলা করলে পুলিশের মার খেতে হয়, তাই রাতের অন্ধকারেই তারা এসব করে।

রাস্তার দুপাশে অজস্র দোকানপাট। বিশেষ করে কাঠের দোকান আর মুড়ি, কদমা,বাতাসা, আগরবাতি, গোলাপজল প্রভৃতি বিক্রয়ের দোকান। এছাড়া কতগুলো সিডি ক্যাসেটের দোকানও রয়েছে।
ওই সব দোকানগুলোতে বিভিন্ন মাজারের গান, বাউল শিল্পিদের গান এবং খাজাবাবার গানের ক্যাসেট বিক্রয় করা হয়।
যারা এখানে ব্যবসা করে তাদের থাকতে থাকতে উৎকট দুর্গন্ধ সয়ে গেছে। কিন্তু নতুন কেউ মাজার এলাকায় এলে নাকে হাত চাপা দেয় কিংবা ওয়াক ওয়াক করে। মাজারের ভিতরে দিন-রাত চব্বিশ ঘন্টা অসংখ্য ফকির-মিসকিন আর আতুড়রা হাত পেতে বসে থাকে দর্শণার্থীদের হতে কিছু প্রাপ্তির আশায়।

মাজারের পিছনেই দিয়াবাড়ী বাস স্ট্যান্ড। তার সাথে সরকারী জায়গার উপর বাশ আর বেড়ার তৈরি ঘরে বস্তিবাসীরা থাকে।

পানির নিচের মাটিতে বাশ পুতে তার উপর কাঠের তক্তা আর বেড়া দিয়ে ঘর ও চলাফেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঘরগুলোর ভিতর হতে সারাক্ষণ একটা বিশ্রী গন্ধ এসে নাকে ঝাপটা মারে। মাঝে মাঝে বাতাসের আঁচে সেই গন্ধটা তীব্র হয়।
বস্তিবাসীরা প্রাকৃতিক কাজ আর দৈনন্দিন যাবতীয় ময়লা ঘরের নিচের পানিতে ফেলে। এ কারণে দিন দিন দুর্গন্ধের পরিমাণ বেড়েই চলেছে।
বস্তিতে বিভিন্ন গ্রামের বিভিন্ন লোকের বাস। সবাই গ্রাম থেকে শহরে এসেছিল একটু চেষ্টার মাধ্যমে নিজের ভাগ্য বদলাতে। কিন্তু ঢাকার এই টাকার খেলার কাছে সবাই হার মেনেছে।

কেউ রিক্সা চালায়, কিংবা কাগজ টোকায়। কেউ কাগজের ব্যবসা, ভাঙ্গারির ব্যবসা করে। কেউবা আবার সারাদিন টাউট-বাটপারি করে বেড়ায়। কিছু মেয়ে আবার অভাবের তাড়ণায় নেমেছে দেহ ব্যবসায় আর গাঁজা-ফেনিসিডিল ব্যবসায়।
বস্তির পেছন দিকে কবরস্থান শুরু। শেষ হয়েছে অনেকদূর পর্যন্ত গিয়ে। বস্তি সংলগ্ন ভাঙ্গারির দোকানে বসেছিল বুড়ো রজব মিয়া। জীবনের পয়ষট্টিটা বছর সে পার করে ফেলেছে। আশেপাশের দোকানের আর বস্তির মাসিক বাড়িভাড়া সেই তোলে।
বস্তির মালিক কমিশনার মাসুদ খানের ছোট ভাই রাহাত খান। সেই রজব মিয়াকে বাড়ি আর দোকানভাড়া তোলার দায়িত্ব দিয়েছে।
রজব মিয়া হল এই বস্তির সবচেয়ে শিক্ষিত মানুষ। মেট্রিক পাস পর্যন্ত পড়ালেখা হয়েছিল তার।
বাড়িভাড়ার রশিদ বইয়ের পাতা উল্টাতে উল্টাতে কলম মিয়ে এসে হাজির হল।
কলম মিয়ার আসল নাম কালাম। কিন্তু কি করে যেন সবাই তাকে কলম মিয়া বলেই ডাকে।
কি ভাইসাব, দোকানভাড়া দিবেন কবে? কলম মিয়াকে জিজ্ঞেস করে রজব মিয়া।
আর দুইডা দিন সবুর করেন। আমার দোকানের মালামাল বেইচা লই। বলে কলম মিয়া।
মালিক রাহাত খানকে সবাই ভীষণ ভয় পায়। এ কারণে নির্দিষ্ট সময়ে অধিকাংশরাই ভাড়া পরিশোধ করে। তবে দুই-চারজন বয়স্ক মুরুব্বী লোক আছে যাদেরকে রাহাত খান কিছু বলে বলে না। তাই তারা সে সুযোগে ভাড়া কিছুটা দেরী করে দেয়।
রাহাত খান অবশ্য এ জমির প্রকৃত মালিক নয়। সে কেমন করে যেন সরকারী জমি নিজে দখল করে নিয়েছে।
তারপর বস্তি আর দোকান তৈরি করে ভাড়া দেওয়া শুরু করেছে।
এ সবই রজব মিয়া নিজ চোখে দেখেছে। সে জানে খানরা অনেক ক্ষমতাশালী।
এমন সময় রজব মিয়ার সামনে সুফিয়া এসে দাঁড়াল। সে এই বস্তিরই শেষের দিকের ঘরটায় থাকে।
সুফিয়া একই সাথে দেহ ব্যবসা আর গাঁজার ব্যবসা করে। তার বাড়ি হল বরিশাল। ঢাকায় তার আগমনের ঘটনা বেশ চমকপ্রদ।
তাদের গ্রামেরই এক শহরে কাজ করা ছেলে আতাউর একদিন সুফিয়ার আম্মাকে বলল- চাচী আপনের মেয়েরে ফাইভ পর্যন্ত যহন পড়াইছেন, আর পড়ান লাগব না। ওরে আমি ঢাকায় কম্পিউটারে চাকরী দিমু। আমনেগোরে ওয় মাসে মাসে টাকাও পাঠাইতে পারব।
এসব কথা শুনে সুফিয়ার আব্বা-আম্মা দুজনেই বেশ খুশী হল।
সুফিয়া জিজ্ঞেস করেছিল- আমিও কি কম্পিউটার চালাইতে পারমু?
একমাস ট্রেনিং নিলেই আস্তে আস্তে সব পারবি। এভাবে বুঝিয়ে সুফিয়াকে ঢাকায় এনে দেহ ব্যবসায় জড়িত করল আতাউর।
তারপর থেকেই সে এই লাইনে আছে। সুফিয়া বাড়িভাড়ার টাকা রজব মিয়ার হাতে দিয়ে বলল- চাচা, এই লও বাড়িভাড়া। ব্যবসা এহন আগের মত নাই যে তোমারে টাইমমত বাড়িভাড়া দিমু। দিনকাল খুবই খারাপ যাইতাছে চাচা। হেদিন আমার লগের লতিফারে পুলিশ ধইরা নিয়া গেছে। এমন হইলে খাইয়া বাঁচমু কেমনে কও তো দেহি। আমরা পেডের দায়েই তো এসব কাম করি। আর যারা বিরানী-পোলাও খাইয়াও দেশের তেরটা বাজায়, হেগোরে পুলিশরা স্যার কইয়া ডাকে। কোন দেশে যে যামুগা বুঝি না।
রজব মিয়া কিছু বলে না।
এই বস্তিতে সৎ-অসৎ উভয় পেশার লোকজনই থাকে।
খানিক বাদে হঠাৎ রাহাত খান এল।
জিনস-এর প্যান্ট আর সাদা-কালো শার্ট ইন করে পড়া। চোখে কাল সানগ্লাস। প্রচন্ড গরমে বেশ ভালই ঘেমেছে রাহাত খান। কিছুক্ষণ সে কলম মিয়ার দোকানে বসে রইল। তারপর হঠাৎ কিছু না বলে সে দোকানের কর্মচারী শফিককে লাথি দিল তিন-চারটা।
হারামজাদা, আমি আইছি আধাঘন্টার বেশী। এহনো চা-সিগারেট আনছ না। দৌড় দিয়া নিয়া আয় যা।
ধমকে উঠল খান।
মনে মনে খানের চৌদ্দ ঘুষ্ঠির অস্তিত্ত উদ্ধার করতে করতে শফিক দোকানে চলল।
তারপর রাহাত খান রজব মিয়া আর রিক্সাচালক হেলালের বাপের দিকে তাকাল। বলল- তোমরা ছয়ডা মাস একটু কষ্ট কইরা অন্য কোন জায়গায় থাকবা। ততদিনে আমি এই বস্তির উপরে বিল্ডিং তুলমু। তোমরা আস্তে আস্তে কিস্তি দিয়া টেকা শোধ কইরা দিবা। কি কন রজব ভাই?
সমর্থনের আশায় সে রজব মিয়ার দিকে তাকাল।
রজব মিয়া কোন কিছু বলতে পারল না। সে ভিষণ অস্তত্বি বোধ করছে। এই লোক কোন কিছুর সমর্থন চাইলে তা নিজের জন্য ক্ষতিকর হলেও মত দিতে হয়।
রাহাত খান বলল- ছয়ডা মাস কষ্ট করবা। জীবনের সব সুখ ফিরা পাইবা।
সবাই চুপ করে রইল। কলম মিয়ার দোকানে কিছুক্ষণের জন্য পিনপতন নীরবতা বিরাজ করল।
রজব মিয়া আচমকা একটা সাহসের কথা বলে ফেলল।
-ভাই, বেড়ার ঘর ভাঙলেই আমরা ঠিক করতে পারি না। পরে বিল্ডিং-এর কিস্তির টেকা আমরা আপনেরে কেমনে দিমু?
খান বলল- এইডা একটা কথা কইলেন? আপনারা যদি না পারেন তেয়লে কি আমি আপনেগোরে ভাগাইয়া দিমু? আপনেরা তো আমারই আত্নীয়-স্বজন। এই জায়গা হওনের পর থিকা আপনেরাইতো আছেন।
হুনেন, এই বস্তির সবার লিগা আমার অন্যরকম একটা দরদ আছে। তাই সবাই যাতে একটা ভালা যায়গায় থাকতে পারে হেই ব্যবস্থা করতে চাই আমি। বাকী আল্লাহর ইচ্ছা।
একটানা এতগুলো কথা বলে সকলের সমর্থন নিলো রাহাত খান।
খান চলে যেতেই বস্তি জুড়ে ফিসফাস আলোচনা শুরু হল। বস্তিবাসীরা সবাই খানের প্রশংসা করতে লাগল।
সুমির মা বলল, খান সাব আমগোরে বিল্ডিং তুইলা ফ্লাট দিব। এর চাইতে খুশীর খবর আর কি আছে!
রাবেয়ার বাপ বলল, জীবনে ঢাকা শহরে ঠাই পাওনের চিন্তা করি নাই। এহনতো আল্লায় একটা ব্যবস্থা কইরা দিসে।
কলম মিয়া বলল, আমি খান সাবরে আগামী মাসের মধ্যে এক লাখ টেকা দিমু।
কলম মিয়ার কথা শুনে অধিকাংশরাই চুপ মেরে গেল। আজকাল কলম মিয়ার ব্যবসা বেশ চনমনে। এই বস্তিতে সেই সবচেয়ে ভাল আয় করে। সে নিশ্চয়ই বেশী টাকা দিয়ে রাহাত খানের মন অর্জন করবে।
কেবল রজব মিয়া সারা বিকেল একটি কথাও বলল না। গ্রীষ্মের তীব্র রৌদ্র তাপের প্রতিফলিত সড়কের দিকে চেয়ে আনমনে কি যেন ভাবতে লাগল।

এক সপ্তাহ পার হল। বস্তিবাসীরা এখন থেকেই তাদের সমস্ত সঞ্চয় রাহাত খানের হাতে তুলে দেওয়া শুরু করেছে। সকলের অভিমত হল দালান তুলতে অনেক টাকা লাগবে। এখন থেকেই কিছু কিছু করে দিলে খানের উপর টাকার চাপ কমবে।
বিকেল বেলা রাহাত খান এসে টাকা নিয়ে গেল আবার। সন্ধ্যার সময় রজব মিয়া বস্তির সবাইকে এক মিটিঙে ডাকল। সকলে উপস্থিত হতে সে গলা খাঁকাড়ি দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করল।
-ভাইসাবেরা, আপনেরা যদি অনুমতি দেন তেয়লে আমি দুইডা কথা বলতে চাই।
সকলে কলরোব করে রজব মিয়াকে উৎসাহিত করল।
যেই ঘরে মিটিঙ বসেছে সেই ঘরটা বস্তির একদম শেষ প্রান্তের একটা ঘর।
রজব মিয়া ভাঙা বেতের চেয়ারটায় শক্ত হয়ে বসল।
বলল, আইচ্ছা, আপনেরা কি মনে করেন যে খান সাব এই জায়গায় বিল্ডিং বানাইব?
কলম মিয়া বলল, এডি কি ধরনের কথা কন চাচা! আমি নিজে খান সাবের লগে ব্যাংকে গেলাম, রাজউক অফিসে গেলাম, দলিল-পত্র দেখলাম। আর আপনে দেহি উল্টা-পাল্টা কথা লাগাইছেন।
রজব মিয়া বলল, আইচ্ছা বুঝলাম। আমিও জানি বিল্ডিং বানাইতাছে। এবার কন দেহি এই বিল্ডিং কি আপনেগোরে বুঝাইয়া দিব?
রাবেয়ার আব্বা বলল, না দিয়া যাইব কই? আমাগোরে আগা-গোড়া হিসাব দিয়া টেকা লইছে, হেমনি আগা-গোড়া হিসাবে বিল্ডিং বুঝাইয়া দিব।
-না চাচা মিয়ারা, আপনেরা যা ভাবতাছেন তা আসল না। আমি এই বিষয়ডা নিয়া দুইদিন চিন্তা করছি। হেরপরে আমি গেলাম খান সাবে যেই কোম্পানীর মাধ্যমে বাড়ি বানাইব হেই কোম্পানীর কাছে। হেরা আমারে কোম্পানীর প্রজেক্ট দেহাইল। হেই জায়গায় দেখলাম যে খান সাবে বাড়িগুলা বিভিন্ন বড়লোকগো কাছে বেচতাছে।
এতটুকু বলে চুপ হয়ে গেল রজব মিয়া।
সমবেত সবার মাঝে এবার তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেল।
কলম মিয়া বলে, এত সহজ মিয়া? টাকা যহন নিছে, মনে করেন হেই টেকা দিয়া আমরা জমি কিননা নিলাম। খান সাব চাইলেই কি আমগোরে উঢাইয়া দিতে পারব?
রাবেয়ার আব্বা বলল, খান সাবের মুখের কথায় জমি ছাইড়া যামু গা? জীবন দিয়া দিমু, তবুও এই বস্তি ছাড়ুম না।
মিটিঙে উপস্থিত সবার মাঝে এক রকম অদ্ভুত সাহস এসে ভড় করল। পরদিন বিকেল বেলা রাহাত খান বস্তিতে এল। গতরাতের মিটিঙে বস্তিবাসীদের যে সাহস তৈরি হয়েছিল, রাহাত খানকে দেখে তা যেন কর্পূরের মত উড়ে গেল।
রাহাত খান বস্তিবাসীদের বলল, কি ভাইয়েরা, আপনেগো মুখ-চোখ কেমন জানি শুকনা লাগতাছে?
কেউ কিছু বলল না।
রাবেয়ার বাপ বলল, ভাইসাব, একটা জরুরী কথা আছে।
রাহাত খান মিষ্টি হেসে বলল, কি কথা মিয়া ভাই কন।
কলম মিয়া খানিকক্ষণ ইতঃস্তত করল। তারপর বলল, ভাই,আমগো ফ্লাট বাড়ি লাগব না। আমরা যেমন আছি তেমনি ভালা। বেশী লোভ করলে এইডাও হারামু।
রাহাত খান দুইচোখ সরু করে তীক্ষ্ণভাবে কি যেন চিন্তা করল। বলল, এইডা কেমন কথা কন, আপনেরা কি আমারে বিশ্বাস করেন না। এই খান যতদিন আছে, ততদিন আপনেরা আছেন।
মূলকথা হচ্ছে কেউ সাহসের সঙ্গে রাহাত খানকে তার কুকীর্তির কথা বলতে পারছে না।
তবে কিছুক্ষণ কথা-বার্তার পর রাহাত খান বুঝতে পারল যে এরা কোনভাবেই বস্তি ছাড়তে রাজি নয়।
এবার সে অন্য পন্থা অবলম্বন করল। বলল, আইচ্ছা, যেই দশ-বার মাস আপনেগোরে কষ্ট করতে কইছিলাম, হেই কয়মাস আপনেরা আমার বিল্ডিং-এ থাকবেন।

কিন্তু বস্তিবাসীরা তাতেও রাজি হল না।

রজব মিয়া বলল, না ভাই। আমগো লিগা এই বস্তিই ভালা, ফ্লাট হইল বড়লোকগো লিগা।
রাহাত খান রজব মিয়ার কথায় যেন সব বুঝতে পারল।
-আইচ্ছা ঠিক আছে। আপনেগো একটা উপকার করতে চাইছিলাম। আপনেগো যহন লাগব না তহন আর কি করা।
বলে একটা সিগারেট ধরিয়ে টানতে টানতে বিদায় নিল রাহাত খান।


একমাস পর।
খদ্দের হতে পাওনা টাকা নিয়ে ঘরের সামনে এসে দাঁড়াল সুফিয়া। হঠাৎ কিসের যেন পোড়া গন্ধ পেল। প্রথমটায় সে পাত্তা দিল না। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই সে দেখতে পেল আগুনের লেলিহান শিখা বস্তির ঘর পুড়িয়ে আকাশ ছোঁয়ার চেষ্টা করছে।
সমগ্র বস্তিবাসীরা চিৎকার করে উঠল- আগুন,আগুন,আগুন!
পুরুষেরা যারা কাজ করছিল তারা কাজ ফেলে দৌড়ে বালতি বালতি পানি এনে আগুন নেভানোর চেষ্টা করতে লাগল।
কেউ কারো দিকে চাওয়ার ফুসরত নেই। যে যার জিনিসপত্র আগলে ধরে রাখতে চাইছে। শিশুগুলোকে মায়েরা আগেই কোলে করে বাইরে এনেছে। কিন্তু সবার চেষ্টাকে বিফল করে পলকেই আগুন পুরো বস্তিতে ছড়িয়ে পড়ল।
কে একজন চিৎকার করে বলল, ফায়ার সার্ভিসে খবর দে জলদি।
কলম মিয়া,খোকন,জসিম সহ বস্তির দোকানদারেরা মালপত্র আগুন থেকে সরানোর চেষ্টা করতে লাগল।
আশেপাশে ততক্ষণে উৎসূক লোকের জমা হয়ে গেছে। অনেকে আগুন নেভানোর জন্য সাহায্যও করছে। কিন্তু আগুন হঠাৎ করেই যেন পুরো বস্তিতে ছড়িয়ে পড়ল।
মটমট করে কাঠ আর শুকনো বেড়াগুলো আগুনে ফাটছে। টিনগুলো মাঝে মাঝে ঠাস ঠাস শব্দ করে জানান দিচ্ছে আগুনের উপস্থিতি।
আধা ঘন্টা পর ফায়ার সার্ভিস এল। তাদের সাথে রাহাত খানও।
রাহাত খানকে দেখে কলম মিয়া ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলল, আমগো কি হইয়া গেল গো ভাইসাব।
রাহাত খান সকলকে সান্তনা দিয়ে আগুন নেভানোর জন্য দমকল বাহিণীর সঙ্গে নিজেও কাজ করতে লাগল।
রজব মিয়া কোনদিকে না তাকিয়ে একটানা পানি ঢালছিল। হঠাৎ রাহাত খানকে দেখে তার ভ্রু কুঁচকে গেল। খানের মুখের দিকে তাকিয়ে রজব মিয়া বুঝে গেল সব।
আগুন তখন পুড়ো বস্তি পুড়িয়ে দিয়ে নিভে গেছে। আর রাহাত খান সেই বস্তির আশ্রয়হীন মানুষগুলোকে ত্রানের মত খাবার আর পোষাক বিলিয়ে দিচ্ছে।



-সমাপ্ত-

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন